সুনামগঞ্জ , বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫ , ২৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতের আপিলের শুনানি ১৩ মে ঈদে টানা ১০ দিন ছুটির প্রজ্ঞাপন জারি, বেসরকারি অফিসও বন্ধ দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া, বিএনপি দেখাল শক্তি-সমর্থন জুবাইদার ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান জামালগঞ্জ-জয়নগর সড়ক এক যুগেও সংস্কার হয়নি : দুর্ভোগে লাখো মানুষ মাদকাসক্ত যুবকের ছুরিকাঘাতে প্রতিবেশী খুন এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণ : দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু অর্থাভাবে চিকিৎসা হচ্ছেনা বাউল শাহ আবদুল তোয়াহেদের দোয়ারাবাজারের বেহাল সড়ক দ্রুত সংস্কারের দাবি ৭ বছরেও শেষ হলো না সেতুর কাজ শান্তিগঞ্জে অগ্নিকান্ডে ৫ পরিবার নিঃস্ব কৃষি ব্যাংক রেমিট্যান্স উৎসব বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান কয়লা কোয়ারিতে মাটি চাপায় শ্রমিক নিহত ছুরিকাঘাতে শিশুকে হত্যা উন্নয়নকাজে অনিয়ম পেলে ঠিকাদার-প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা : অতিরিক্ত সচিব আব্দুল লতিফ মোল্লা ইউএনও’র বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিলে বিএনপি সমর্থকদের হামলা মরে যাচ্ছে কানাইখালী নদী জেলায় উৎপাদন হবে ৩২০ কোটি টাকার বাদাম ছাত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় চাচাকে কুপিয়ে জখম করল বখাটেরা ছাতকে দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ২০

দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া, বিএনপি দেখাল শক্তি-সমর্থন

  • আপলোড সময় : ০৭-০৫-২০২৫ ০৭:৩১:৪৯ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৭-০৫-২০২৫ ০৭:৩৯:৫৭ পূর্বাহ্ন
দেশে ফিরলেন খালেদা জিয়া, বিএনপি দেখাল শক্তি-সমর্থন
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
চিকিৎসার জন্য চার মাস লন্ডনে ছেলের কাছে কাটিয়ে দেশে ফিরলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া; আর সেই উপলক্ষে বিমানবন্দর থেকে গুলশান ১০ কিলোমিটার পথজুড়ে হাজারো নেতাকর্মীর সমাবেশ ঘটিয়ে জনপ্রিয়তা আর সমর্থনের জানান দিল তার দল বিএনপি।
মঙ্গলবার সকালে বিমানবন্দরে নামার পর নেতাকর্মীদের প্রচ- ভিড় ঠেলে শুভেচ্ছায় সিক্ত হতে হতে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজায়’ পৌঁছাতে খালেদা জিয়ার প্রায় দুই ঘণ্টা লেগে যায়।
২০১৮ সালে কারাগারে যাওয়ার পর গত সাত বছরে কোনো জনসমাবেশে সশরীরে অংশ নেননি বিএনপি চেয়ারপারসন। এবার তার দেশে ফেরা ঘিরে কার্যত বড় আকারের জমায়েত ঘটাল বিএনপি, যারা ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে।

বিএনপি নেত্রী ঢাকায় পৌঁছানোর আগে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিমানবন্দরের সামনে বলেন, “খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা গণতন্ত্রের উত্তরণের পথকে সহজ করবে। আজ দেশের জন্য ও জনগণের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য দিন।
” মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে বিএনপি চেয়ারপারসনকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এরপর সোয়া ১১টায় বিমানবন্দর থেকে রওনা হয়ে গুলশানের বাসায় পৌঁছান দুপুর ১টা ২৬ মিনিটে। এসময় সড়কের পাশে অবস্থান নেওয়া হাজার হাজার নেতাকর্মী জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানায়। বিএনপি নেত্রী গাড়ি থেকে হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছার জবাব দেন।
বিমানবন্দর থেকে ‘ফিরোজা’ পর্যন্ত নেত্রীকে বরণ করে নিতে ‘খালেদা জিয়ার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’; ‘তারেক জিয়া বীরের বেশে, আসবে ফিরে বাংলাদেশে’; ‘খালেদা জিয়ার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’সহ বিভিন্ন স্লোগান ধরেন নেতাকর্মীরা।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে যেদিন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়, সেদিনই বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তারেক রহমানকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর সোয়া ৭ বছর ধরে লন্ডন থেকে ভিডিও কলেই তিনি দল চালাচ্ছেন। আর দেশে ঝড়-ঝাপটা সামলে বিএনপিকে টিকিয়ে রেখেছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল আলমগীরসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা। ২০২০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেয়। কিন্তু দুই শর্তের কারণে তিনি কার্যত বন্দি ছিলেন বাসা আর হাসপাতালের জীবনে। রাজনৈতিক কোনো কর্মকান্ডে তাকে আর দেখা যায়নি।
৫ আগস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর রাষ্ট্রপতি সাজা মওকুফ করে খালেদা জিয়াকে পুরোপুরি মুক্তি দেন। কিন্তু ৭৯ বছর বয়সে নানা অসুস্থতা নিয়ে দলের কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তার সরাসরি অংশ নেওয়া হয়নি। চিকিৎসা নিয়ে লন্ডন থেকে তার ফেরার যাত্রা কার্যত রাজনৈতিক কর্মসূচিতেই রূপ নেয়।
দেশে ফেরার যাত্রা : লন্ডনের স্থানীয় সময় সোমবার বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে খালেদা জিয়াকে নিয়ে হিথ্রো বিমানবন্দর ত্যাগ করে কাতারের আমিরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স। পথে দোহায় যাত্রা বিরতি দিয়ে উড়োজাহাজটি ঢাকায় পৌঁছায় সকালে। ফেরার পথে তার সঙ্গী হয়েছেন দুই পুত্রবধূ- তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান সিঁথিসহ ১৩ জন। বিএনপি নেত্রীর সফর সঙ্গীদের মধ্যে আরও ছিলেন- তার মেডিকেল বোর্ডের প্রধান শাহাবুদ্দিন তালুকদার, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, লন্ডন বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ।
বিমানবন্দরে বিএনপি চেয়ারপারসনকে স্বাগত জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও সেলিমা রহমান।

খালেদা জিয়া ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে থেকে গুলশানের বাসায় পৌঁছান সাদা রঙের এসইউভিতে করে। সাধারণত তিনি গাড়ির সামনের আসনে বসেন না, কিন্তু এদিন ব্যতিক্রম দেখা গেল। পেছনের আসনে ছিলেন তার দুই পুত্রবধূ। খালেদা জিয়ার জন্য গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কে ‘ফিরোজা’ আগেই পুরোপুরি প্রস্তুত করার কথা বিএনপির তরফে জানানো হয়েছিল। ফিরোজায় খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান তার মেজ বোন সেলিমা ইসলাম, ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার, শামীমের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, জোবাইদা রহমানের বড় বোন শাহীনা জামান বিন্দু এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া বিএনপি নেত্রীর মেডিকেল বোর্ডের সদস্য এফ এম সিদ্দিক, বিএনপি নেতা লুৎফুজ্জামান বাবর, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ ছিলেন সেখানে।

পথে পথে উচ্ছ্বাস : নেত্রীকে বরণ করে নিতে এদিন ভোরের আলো ফোটার পর থেকেই থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিমানবন্দর সড়কে জড়ো হতে শুরু করেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের খিলক্ষেত, কুর্মিটোলা, বনানী, কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ে অবস্থান নেন। তারা পিকআপ কিংবা বাসে করে গান বাজাতে-বাজাতে দলের পতাকা, দেশের পতাকা নিয়ে উপস্থিত হন সড়কে। কেউ-কেউ মাথায় দলের পতাকা লাগিয়ে আসেন। কারো হাতে শোভা পায় দলীয় ব্যানার, ফেস্টুন। কোনো কোনো গ্রুপ আসেন ব্যান্ডপার্টি নিয়ে। খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা উপলক্ষে নেতাকর্মীদের ভিড় সামলাতে ঢাকা মহানগর পুলিশও বিমানবন্দর সড়কে যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ করার কথা জানায়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচলের সুযোগ রাখা হয়। ঢাকা সেনানিবাসের রাস্তায় হালকা যানবাহন চলাচলের সুযোগও থাকে। জনসাধারণকে এদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গুলশান-বনানী থেকে উত্তরা পর্যন্ত সড়ক যথাসম্ভব পরিহার করে বিকল্প রাস্তায় চলাচলের অনুরোধ করা হয়। বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীদের অবস্থানের ফলে কোনো পূর্ব নির্দেশনা না থাকলেও ‘বাধ্য হয়ে’ বনানী থেকে গুলশানগামী সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ট্রাফিক গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার জিয়াউর রহমান জানান, বনানী থেকে গুলশান দুই নম্বর সড়কের মুখে ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেন তারা। গুলশানের দিকে যেতে চাওয়া যানবাহনকে সামনে এগিয়ে বনানী ১১ নম্বর সড়ক ব্যবহার করতে বলেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। নেতাকর্মীদের অবস্থান ঘিরে সড়কে ও বিমানবন্দর এলাকায় বিপুল সংখ্যক সেনা সদস্য, পুলিশ, র‌্যাব, এপিবিএন ও আনসার সদস্যকে অবস্থান নিতে দেখা যায়। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরা ঘিরে ঢাকার সড়কে যানজট হতে পারে- এমন শঙ্কায় বিদেশগামী যাত্রীদের বিমানবন্দরে যেতে হাতে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে বের হওয়ার অনুরোধ করে এয়ারলাইন্সগুলো। বিমানবন্দর এলাকায় নেওয়া হয় কড়া নিরাপত্তা।

লন্ডনের চার মাস : ৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো রাজকীয় বহরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স করে গত ৭ জানুয়ারি লন্ডনে যান। সেখানে লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। টানা ১৭ দিন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি ২৫ জানুয়ারি থেকে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন। লন্ডনে ছেলের কাছে থাকার মানসিক প্রশান্তিতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগের চেয়ে সুস্থবোধ করছেন বলে জানিয়েছিলেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এজেডএম জাহিদ হোসেন। গত ৪ মার্চ জাহিদ বলেন, “ম্যাডাম মোটামুটি আগের চেয়ে অনেকটা সুস্থ বোধ করছেন। মানসিক প্রশান্তি উনার শারীরিক সুস্থতার পরিমাণ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।” চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরার জন্য সোমবার দুপুরে খালেদা জিয়া লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হন। তার বড় ছেলে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজেই গাড়ি চালিয়ে মাকে বিমানবন্দরে নিয়ে যান। তারেকের মেয়ে জায়মা রহমানও গাড়িতে ছিলেন। বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিদায় জানাতে দলটির প্রবাসী নেতাকর্মীরাও হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিড় করেন। বিদায় বেলায় টার্মিনালে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। হুইল চেয়ারে বসা খালেদা জিয়াকে জড়িয়ে ধরেন ছেলে তারেক ও নাতনি জায়মা। ছেলেকে দেখিয়ে বিমানবন্দরে উপস্থিত বিএনপিকর্মীদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, “ভাইয়াকে দেখে রেখো।”

নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha

কমেন্ট বক্স